বিড়াল আঁচড় দিলে করণীয় কি

ভূমিকা:

বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতেই বিড়াল মানুষের নিকট অত্যন্ত প্রিয় একটি পোষা প্রাণী। এরা স্বভাবতই মিশুক হলেও অনেক সময় খেলার ছলে বা আত্মরক্ষার প্রয়োজনে মালিক কিংবা আশেপাশের মানুষকে আঁচড়ে দিতে পারে। অনেকেই মনে করেন, বিড়ালের আঁচড় তেমন গুরুতর কিছু নয়। কিন্তু বাস্তবে বিড়ালের আঁচড়ের মাধ্যমে শরীরে সংক্রমণ, প্রদাহ কিংবা ক্যাট স্ক্র্যাচ ডিজিজ (Cat Scratch Disease) পর্যন্ত হতে পারে। তাই বিষয়ে সচেতন থাকা এবং সঠিক করণীয় জানা অত্যন্ত জরুরি।

এই নিবন্ধে আমরা আলোচনা করব:

বিড়াল কেন আঁচড়ায়

আঁচড়ের ক্ষতিকর দিক

আঁচড়ের পরপরই কী করণীয়

চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা

দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধ ব্যবস্থা

সাধারণ কিছু ভুল ধারণা

বিড়াল কেন আঁচড় দেয়?

বিড়াল আঁচড়ানোর পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

1. আত্মরক্ষা: অপরিচিত কেউ কাছে এলে বা হুমকির মুখে পড়লে বিড়াল আত্মরক্ষার জন্য আঁচড়াতে পারে।

2. খেলার ছলে: ছোট বিড়ালছানা বা তরুণ বিড়াল প্রায়ই খেলার সময় মানুষকে আঁচড়ে দেয়।

3. ভয় বা আতঙ্ক: হঠাৎ শব্দ বা অপরিচিত পরিবেশ বিড়ালকে আতঙ্কিত করে তোলে। তখন এরা আঁচড় দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে।

4. অতিরিক্ত উত্তেজনা: বেশি আদর করলে বা বারবার বিরক্ত করলে বিড়াল হঠাৎ রেগে গিয়ে আঁচড় মেরে বসতে পারে।

5. শিকারী প্রবৃত্তি: বিড়ালের স্বভাবজাত প্রবৃত্তি হলো শিকার করা। খেলার সময় প্রবৃত্তি অনেক সময় মানুষের গায়েও প্রকাশ পায়।

বিড়ালের আঁচড় কতটা ক্ষতিকর?

অনেকেই ভাবেন, আঁচড় কেবল সামান্য ক্ষত। কিন্তু আসলে এর মাধ্যমে নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

যেমন:

1. ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ

বিড়ালের নখে নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে। আঁচড়ের মাধ্যমে এগুলো রক্তে প্রবেশ করলে ক্ষত ফুলে যেতে পারে, লালচে দাগ, ব্যথা বা পুঁজ হতে পারে।

2. ক্যাট স্ক্র্যাচ ডিজিজ (CSD)

এটি Bartonella henselae নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়। সাধারণত বিড়ালের আঁচড় বা কামড় থেকে এটি ছড়ায়। এগুলো হলো

আঁচড়ের স্থানে ফোলা

লিম্ফ নোড বড় হয়ে যাওয়া

জ্বর, মাথাব্যথা, ক্লান্তি

3. টিটেনাস

যদিও বিরল, তবে গভীর আঁচড়ের মাধ্যমে টিটেনাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে যাদের টিটেনাস টিকার ডোজ অনেক পুরনো।

4. রেবিসের সম্ভাবনা

যদি বিড়ালটি বেওয়ারিশ বা টিকা দেওয়া না থাকে, তবে আঁচড়ের মাধ্যমে রেবিস ভাইরাস ছড়াতে পারে। যদিও আঁচড় থেকে এর ঝুঁকি কামড়ের তুলনায় অনেক কম, তবুও একে অবহেলা করা উচিত নয়।

বিড়াল আঁচড় দিলে করণীয় ধাপে ধাপে দেওয়্ হলো:

. তাত্ক্ষণিকভাবে ক্ষত পরিষ্কার করা

আঁচড় লাগার সাথে সাথেই ক্ষতস্থল সাবান পরিষ্কার পানি দিয়ে অন্তত মিনিট ধুতে হবে।

অ্যান্টিসেপটিক সলিউশন (যেমন পভিডন-আয়োডিন বা ক্লোরহেক্সিডিন) ব্যবহার করা যেতে পারে।

. রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ

যদি রক্তপাত হয়, তবে পরিষ্কার কাপড় বা গজ দিয়ে হালকাভাবে চাপ দিন।

বেশি রক্তপাত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

. অ্যান্টিবায়োটিক মলম ব্যবহার

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট খাওয়া উচিত নয়, তবে অ্যান্টিবায়োটিক মলম ব্যবহার করা যেতে পারে।

. ব্যথা ফোলা কমানো

প্রয়োজনে পেইনকিলার (যেমন প্যারাসিটামল) খাওয়া যেতে পারে।

বরফের প্যাক ক্ষতস্থলে ১০-১৫ মিনিট ধরে রাখতে পারেন।

. টিকা গ্রহণ

যদি শেষ টিটেনাস টিকা নেওয়ার পর -১০ বছর পার হয়ে যায়, তবে নতুন করে টিটেনাস টিকা (TT বা Tdap) নেওয়া উচিত।

যদি আঁচড় গুরুতর হয় বা বিড়ালের রেবিস টিকা না দেওয়া থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে রেবিস টিকা নেওয়া প্রয়োজন।

. চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া

নিচের পরিস্থিতিতে অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে

ক্ষত বড় বা গভীর হলে

ক্ষত ফুলে গেলে, পুঁজ হলে বা অতিরিক্ত ব্যথা হলে

জ্বর, শরীরব্যথা, ক্লান্তি ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিলে

যদি বিড়ালটি বেওয়ারিশ হয় বা টিকা দেওয়া আছে কিনা নিশ্চিত না হন

গৃহস্থালি প্রতিকার যত্ন:

কিছু সাধারণ গৃহস্থালি যত্ন ক্ষত সারাতে সাহায্য করে

1. ক্ষত সবসময় পরিষ্কার শুকনো রাখুন।

2. ময়লা হাত দিয়ে আঁচড়ের স্থানে হাত দেবেন না।

3. ক্ষতস্থলে আঁচড়ানো বা চুলকানো থেকে বিরত থাকুন।

4. আঁচড়ের দাগ কমানোর জন্য নিরাময়ের পর ভিটামিন- অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে।

প্রতিরোধ ব্যবস্থা:

বিড়ালকে নিয়মিত রেবিস টিকা দিন।

বিড়ালের নখ নিয়মিত কাটুন।

বিড়ালের সাথে খেলার সময় সতর্ক থাকুন।

ছোট বাচ্চাদের বিড়ালের সাথে খেলতে দিলে তদারকি করুন।

সাধারণ কিছু ভুল ধারণা:

1. বিড়ালের আঁচড় তেমন কিছু নয়।

 ভুল: এটি ছোট মনে হলেও সংক্রমণ মারাত্মক হতে পারে।

2. ক্ষত শুকিয়ে গেলে টিকা দরকার নেই।

ভুল: ক্ষত শুকালেও সংক্রমণ ভেতরে ছড়াতে পারে। টিকার প্রয়োজনীয়তা চিকিৎসকই ঠিক করবেন।

3. বাড়িতে অ্যালকোহল দিলেই যথেষ্ট।

আংশিক সত্য হলো: অ্যালকোহল প্রাথমিকভাবে ব্যবহার করা যায়, তবে সাবান-পানি দিয়ে ভালোভাবে ধোয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

মূলকথা:

বিড়াল আমাদের খুব প্রিয় একটি প্রাণী, তবে এর আঁচড় অবহেলা করলে বিপদ ডেকে আনতে পারে। সামান্য আঁচড় হলেও তৎক্ষণাৎ সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা, প্রয়োজনে অ্যান্টিসেপটিক ব্যবহার, টিটেনাস বা রেবিস টিকা নেওয়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। একইসাথে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ভবিষ্যতে ধরনের ঝুঁকি অনেকটা এড়ানো যায়।

মনে রাখবেন: সতর্কতা প্রতিকার অপেক্ষা শ্রেয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url