বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় বাদাম একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও পুষ্টিকর খাবার। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ বাদাম খায় আমাদের দেশে যেমন চিনেবাদাম, কাজুবাদাম, আখরোট ,কাঠবাদাম, পেস্তা বাদাম ইত্যাদি নানা ধরনের বাদাম পাওয়া যায়। সেগুলো শুধু সাধেই নয় শরীরের জন্য অনেক উপকারী। কিন্তু প্রতিটি ভালো জিনিসের যেমন ভালো দিক থাকে তেমনি কিছু খারাপ দিকও থাকে তাই এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিতভাবে জানবো-বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।

প্রতিদিনের জীবনে আমরা বিভিন্ন ধরনের খাবার খাই। কিন্তু সব খাবার সমান পুষ্টি দেয় না বাদাম এমন একটি খাদ্য যা আকারে ছোট হলেও পুষ্টিগুণে ভরপুর।এতে প্রোটিন, আঁশ, ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সাইড, এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত ও পরিমাণমতো বাদাম খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, ত্বক ও চুল সুন্দর থাকে, এমনকি ওজন নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে।

বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা বিষয়ে আমরা যা যা জানবোঃ

তবে অতিরিক্ত বাদাম খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে তাই আমাদের জানতে হবে-কখন কতটা এবং কিভাবে বাদাম খাওয়া দরকার। তাই মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে আমরা বুঝে নেব বাদাম খাওয়ার উপকারিতা, কেন জানা জরুরী।

বাদামের পুষ্টিগুণঃ

বাদামে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ওমেগা-৩ চর্বি। এগুলো শরীরের ক্ষমতা বাড়ায়, মস্তিষ্ককে তীক্ষ্ণ করে এবং কোষের ক্ষয় রোধ করে।

প্রতিদিন অল্প পরিমাণে বাদাম খেলে শরীরে প্রয়োজনীয় চর্বি ও শক্তি সরবরাহ হয়। চিনা বাদামে থাকে প্রচুর প্রোটিন যার শিশু ও বৃদ্ধ উভয়ের জন্য খুবই উপকারী কাঠবাদাম মস্তিষ্ককে যোগায়, আখরোট হার্টের জন্য খুব ভালো, আর পেজটা বাদাম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে। এসব পুষ্টিগুণের কারণেই মানুষ জানতে চাই-বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কিভাবে আমাদের দেহে প্রভাব ফেলে।

চলুন আমরা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে আসি

হৃদযন্ত্রের জন্য বাদামের উপকারিতাঃ

বাদামে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন ই এবং ম্যাগনেসিয়াম রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে। ফলে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।এটি বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এর মধ্যে অন্যতম ভালো দিক।

মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাদামের সহায়তাঃ

কাঠবাদাম ও আখরোটে থাকা ওমেগা-৩ মস্তিষ্কের কোষের বৃদ্ধি ঘটায়। যারা নিয়মিত সকালে ভেজানো কাঠবাদাম খান তাদের স্মরণশক্তি ও মনোযোগ অনেক প্রখর হয়ে থাকে তাই শিক্ষার্থী ও বুদ্ধিজীবীদের জন্য এটি অত্যন্ত উপকারী হিসেবে ধরা হয়।

ত্বক ও চুলের যত্নে বাদামঃ

বাদামে থাকা ভিটামিন ই টগকে উজ্জ্বল করে ও চুলের পুষ্টি যোগায়। নিয়মিত বাদাম খেলে ত্বকের রুক্ষতা দূর হয়, এবং চুল পড়া কমে যায় অনেক প্রাচীন চিকিৎসা গ্রন্থে বলা হয়েছে ত্বকে সুন্দর রাখতে বাদাম তেল ব্যবহার অত্যন্ত উপকারী।

ওজন নিয়ন্ত্রণে বাদামের সহায়তাঃ

যারা অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চিন্তিত তারা অল্প পরিমাণে বাদাম খেলে উপকৃত হতে পারেন । এবং এভাবে অতিরিক্ত ক্ষুদা নিয়ন্ত্রণ করে ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া কমে যায়।

রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে বাদামের কাজঃ

ডাইবেটিস রোগীদের জন্য বাদাম খুবই উপকারী ধরা হয়। এতে থাকা আর ও স্বাস্থ্যকর চর্বি রক্তের শর্করার মাত্রা ঠিক রাখে। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বাদাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে

বাদাম কিভাবে হার ও দাঁত মজবুত করে?

বাদামে থাকা ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস হার ও দাঁতের গঠন মজবুত রাখে বৃদ্ধ বয়সে হাড় ক্ষয় রোধে বাদাম সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাদাম এর কাজঃ

বাদামে থাকা বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ক্ষতিকর পদার্থ দূর করে এতে শরীর সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমে।

এই উপকারিতা গুলো দেখেই বোঝা যায়-বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জানা কতটা প্রয়োজন।

চলুন এবার আমরা জানব বাদাম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কেঃ

যদিও বাদাম খুব পুষ্টিকর তবুও অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে বা ভুলভাবে খাওয়ার কারণে শরীরে কিছু ক্ষতিকর প্রভাব আনতে পারে। এখন দেখা যাক বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এর মধ্যে কোন দিকগুলো নেতিবাচক।

অতিরিক্ত চর্বি ও ক্যালরি বৃদ্ধিতে বাদাম-বাদামের চর্বি বেশি থাকে তাই অতিরিক্ত খেলে শরীরে ক্যালরি জমে যায় যা স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজনের কারণ হতে পারে বলে ধারণা করা যায়।

হজমে সমস্যা-অনেকের জন্য বাদাম হজমে ভারী হতে পারে একসাথে বেশি পরিমাণে বাদাম খেলে পেটে সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন পেট ফাঁপা, গ্যাস বা কোষ্ঠকাঠিন্য ধরনের সমস্যা।

এলার্জির সমস্যায় বাদাম-অনেক মানুষের বাদামে এলার্জি থাকতে পারে তাদের ক্ষেত্রে সামান্য বাদাম খেলেও সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন ধরেন শ্বাসকষ্ট বা চোখ ফুলে যাওয়া ইত্যাদি। তাই এলার্জি আছে এমন মানুষদের ক্ষেত্রে বাদাম এড়িয়ে চলাই ভালো।

সংরক্ষিত বাদাম থেকে বিষক্রিয়া-, দীর্ঘদিন ধরে রাখা বাদাম আদ্রতা পেলে তাতে বিষাক্ত ছত্রাক জন্মাতে পারে যার শরীরে প্রবেশ করলে লিভারের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।

এই দিকগুলো থেকে আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারি বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই আছে তাই পরিমিতভাবে খাওয়া অত্যন্ত জরুরি।

বাদাম খাওয়ার সঠিক নিয়মঃ

১. প্রতিদিন পাঁচ ৫-৬ কি কাটবাদাম,৩-৪টি আখরোট,১০-১৫ টি চিনেবাদাম বা ৫ টি পেস্তা বাদাম খাওয়া যথেষ্ট।

২. ভিজিয়ে বাদাম খেলে তা হজমের সহজ হয় এবং পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পায়।

৩. সকাল বা বিকেলের নাস্তা হিসেবে বাদাম খাওয়া ভালো।

৪. লবণ বা তেল ছাড়া কাঁচা বাদাম খাওয়া ভালো ও স্বাস্থ্যকর।

যদি উপরের এই নিয়ম মেনে বাদাম খাওয়া যায় তাহলে বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এর মধ্যে উপকারটাই বেশি পাওয়া যাবে।

বাদামের যে সকল গুনগুলো রয়েছে তা হলোঃ

চিনেবাদাম-চিনে বাদামের প্রোটিন বেশি থাকে এটি শ্রমজীবী মানুষের জন্য শক্তির উৎস এছাড়া হৃদরোগ প্রতিরোধ সহায়তা করে।

কাঠবাদাম-কাঠবাদাম স্মৃতিশক্তি বাড়ায় ত্বক সুন্দর রাখি এবং হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে।

আখরোট-আখরোট এ ওমেগা-৩ বেশি থাকে জাম মস্তিষ্ক ও হৃতন্ত্রের জন্য উপকারী।

কাজুবাদাম-কাজুবাদাম রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়ায় ও ত্বক উজ্জ্বল করে।

পেস্তা-পেস্তা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং দৃষ্টিশক্তির রক্ষা করে।

প্রত্যেক বাদামের আলাদা আলাদা গুণ থাকলেও অতিরিক্ত খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে তাই আবারও মনে রাখা দরকার বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা মনোযোগ দেওয়া উচিত।

মস্তিষ্ক ও মানসিক স্বাস্থ্যে বাদামের ভূমিকাঃ

মস্তিষ্কে প্রয়োজনীয় চর্বি ও পুষ্টি সরবরাহে বাদামের ভূমিকা অপরিসীম নিয়মিত বাদাম খেলে হতাশা, ক্লান্তি ও মানসিক চাপ কমে। এতে থাকা ভিটামিন বি ও ম্যাগনেসিয়াম স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় রাখে গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত বাদাম খান তাদের মানসিক সক্ষমতা বেশি তাই মন ভালো রাখতে প্রতিদিন অল্প বাদাম খাওয়া অভ্যাস করা উচিত। স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জানা জরুরী যাতে অতিরিক্ত বাদাম খাওয়ার মাধ্যমে ক্ষতি না হয়।

শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য বাদামের ভূমিকাঃ

শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে বাদামের ভূমিকা অনেক কাঠবাদাম ও চিনেবাদাম শিশুদের জন্য বিশেষ উপকারিতা তবে খুব ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে পুরো বাদাম না দিয়ে গুঁড়ো করে বা দুধে মিশে দেওয়াই ভালো। বৃদ্ধদের জন্য বাদাম হাড় মজবুত রাখে ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। তবে এদের পরিমাণে সাবধান থাকা উচিত কারণ হজম শক্তি দুর্বল থাকে। তাই বয়সের বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা ভিন্ন হয়ে থাকতে পারে।

ঘরোয়া উপায়ে বাদামের কিছু ব্যবহারঃ

১. কাঠবাদাম ভিজিয়ে দুধের সঙ্গে খেলে শক্তি বৃদ্ধি পায়

২. লাগালে শুষ্কতা দূর হয়

৩. আখরোট গুড়ো করে মধুর সঙ্গে খেলে ত্বক উজ্জ্বল হয়

৪. পাদাম ও দুধ মিশিয়ে খেলে রক্তবর্ধক হিসেবে কাজ করে।

এইসব ঘরোয়া পদ্ধতি আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্যের অংশ যেখানে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে-বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরী।

বাদাম নিয়ে কিছু প্রচলিত ধারণাঃ

অনেকেই মনে করেন বাদাম খেলে শরীর গরম হয়ে যায়, তাই গ্রীষ্মকালে বাদাম খাওয়া উচিত নয় কিন্তু এটি পুরোপুরি সঠিক কথা নয় অল্প পরিমাণে বাদাম সারা বছরই খাওয়া উচিত আরও একটি ধারণা হলো, বাদাম খেলে মোটা হয়ে যায় আসলে পরিমিত পরিমাণে খেলে তা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এমন ভুল ধারণা দূর করতে হলে আমাদের সঠিকভাবে জানতে হবে-বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।

বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতার মূল অংশঃ

প্রকৃতি আমাদের যে দান দিয়েছে তার মধ্যে বাদাম একটি আশ্চর্য পুষ্টিকর উপহার বলে ধারণা করা যায়।এতে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব ধরনের পুষ্টি উপাদানই রয়েছে প্রতিদিন অল্প পরিমাণে বাদাম খেলে আমরা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, চর্মরোগ ও মানসিক চাপ থেকে রক্ষা পেতে পারি্ তবে অতিরিক্ত খাওয়া, পুরনো বাদাম, বা লবণযুক্ত বাদাম খাওয়ার শরীরের ক্ষতি করতে পারে। তাই খাদ্য তালিকায় বাদাম যুক্ত করার আগে জানা দরকার বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা।

যদি আমরা পরিমাপ মতো সঠিক নিয়মে বাদাম খাই তাহলে এর উপকারিতা অসীম তাই জীবনের প্রতিটি স্তরে-শিশু,যুবক, বৃদ্ধ সবার জন্যই বাদাম একটি মূল্যবান খাদ্য।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url